শ্বাসণালীতে কোন কিছু ঢুকে গেলে কি করণীয় ?

শ্বাসণালীতে কোন কিছু ঢুকে গেলে কি করণীয় ?

WorkitBD_-image002-1558352844.jpg

হঠাৎ করে শ্বাসণালীতে বাইরের কোন বস্তু দূর্ঘটনাবসত ঢুকে যেতে পারে যে কারো। তবে এই ঘটচনার সবচেয়ে বড়শিকার হল স্কুলে যাওয়ার ঠিক আগের বয়সের শিশুরা অর্থাৎ ৪/৫ বৎসর বয়স থেকে শুরম্ন করে এর নীচের বয়সেরশিশুরা। এর ফলে বাচ্চারা বিভিন্ন প্রকার শারিরীক ভোগানিত্মর হয় এবং মৃত্যুর ঘটনাও কম নয়।

আমাদের কাছে মা-বাবার যখন বাচ্চাদের নিয়ে আসেন, তখন তারা এই রকম একটি ইতিহাস দেন যে, বাচ্চা পুঁথি বামার্বেল দিয়ে খেলছিল, হঠাৎ তা মুখে দিয়ে গিলে ফেলে (মূলত তা অধিকাংশ ড়্গেত্রে চলে যায় শ্বাসণালীতে)। আর তখনথেকেই বাচ্চা ক্রমাগত কাশি, শ্বাসকষ্ট আর বুকে ঘড় ঘড় শব্দ নিয়ে ভুগছে (চিত্র :১২)। শ্বাসাণালীতে কোন কিছু ডুকেযাওয়ার বিষয়টি যদি অভিভাবকদের দৃষ্টিগোচন না হয়, তাহলে সময়ের সাথে সাথে বাচ্চাদের ফুসফুস ক্রমাগতড়্গতিগ্রসত্ম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই পরিস্থিতিতে বাচ্চারা প্রায়ই ফুসফুসের সংক্রমণে আক্রানত্ম হতে থাকে। অনেকসময় বাচ্চার গলার বসে যায়, ঘন ঘন শ্বাস নিতে থাকে প্রভৃতি।

জাতীয় বড়্গব্যাধি ইনিষ্টিটিউট ও হাসপাতালে বিভিন্ন সময় নিয়ে আসা বাচ্চাদের, যারা শ্বাসণালীতে বিভিন্ন রকম আটকেথাকা বস্তুসহ ভর্তি হয়েছে, তাদের শ্বাসণালী থেকে নিম্নলিখিত বস্তুগুলো উদ্ধার হয়েছে। যেমন- (১) বিভিন্ন রকম ফলেরবীচি, চিনাবাদাম (২) আলপিন, সেফটিপিন, ছোট পেড়েক (৩) খেলনার ড়্গুদ্র অংশ  (৪) কলমের বিভিন্ন অংশ  (৫)মার্বেল, পুঁথি প্রভৃতি। আর বড়দের ড়্গেত্রে পাওয়া যায়, নকল দাঁত, মাংসের হাড়, সুপাড়ি ইত্যাদি।

বাইরের বস্তু যেন শ্বাসণালীতে চলে না যায়, সেই ড়্গেত্রে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নেয়া যায় যেমন-

  1. চার বছরের নীচের বাচ্চাদের এমন ছোট খেলনা না দেয়া যেগুলির পুরোটা বা খন্ড বিশেষ মুখের মধ্যে বাচ্চারা ঢুকিয়েফেলতে পারে। যেমন- ছোট গাড়ি যেটির ছোটর ছোট চাকাও খুলে ফেলা যায়।
  2. এই বয়সের নীচের বাচ্চাদের কিছু ছোট শক্ত খাবার যেমন- শক্ত চকলেট, বাদাম, ফলের বীচি প্রভৃতি না দেয়া।
  3. বাচ্চাদেরকে খাবার ছোট ছোট টুকরো করে দেয়া যাতে খাবার গলায় আটকে না যায়।
  4. খাবার মুখে নিয়ে বাচ্চারা যেন দৌড়া-দৌড়ি বা কথা না বলে।
  5. মার্বেল, সেফটিফিন, কানের দুল, পুুঁথি, ট্যাবলেট প্রভৃতি বাচ্চাদের হাতের নাগালের বাইরে রাখা।
  6. বড়রা অনেক সময় মুখে খাবার নিয়ে কিংবা ঠোট বা দাঁতের ফাঁকে বিভিন্ন জিনিস যেমন ক্লিপ, পেড়েক প্রভৃতি নিয়েকথা বলে অথবা বিভিন্ন কাজ করে, এই অভ্যাসটি পরিহার করা।
  7. যথাযথ ভাবে নকল দাঁত ব্যবহার করা, যাতে তা শ্বাসণালীতে চলে না যায়।

 

এক বৎসরের উপরে যাদের বয়স, তাদে ড়্গেত্রে বাইরের বস্তু শ্বাসণালীতে আটকে যেয়ে দম বন্ধ হওয়ারউপক্রম হলে নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারি, একই সাথে যেখানে থোরাসিক সার্জনরা (মূল তারাইব্রোঙ্কোসকপি করি শ্বাসণালীর ভিতর থেকে বাইরের বস্তু বের করেন) কাজ করেন সে ধরনের হাসপাতালেরোগীকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

2-1.jpg

চিত্র :  (হেই লিক প্রক্রিয়া)

  1. এই ধরণের রোগীদের শরীরের পিছন দিক দিয়ে দুই ডানার মাঝখানে হাতের তালুর শক্ত অংশ দিয়ে ধাক্কা দিব। তখনকাশির সাথে বস্তুটি শ্বাসণালী থেকে বের হয়ে আসতে পারে। যদি বের না হয়, এই প্রক্রিয়াটি পাঁচবার অনুসরণ করব।
  2. এরপরও রোগীর শ্বাসণালী পরিষ্কার না হলে, আমরা হেইম লিক প্রক্রিয়াটি (চিত্র:২) (heimlich maneuver)  অনুসরণকরতে পারি। এই পদ্ধতিতে রোগীকে পিছন দিক থেকে জাপটে ধরতে হয় এবং হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নাভীর উপর হাতস্থাপন করে ঊর্ধ্বমুখী চাপ দিতে হয়। সফল না হওয়া পর্যনত্ম প্রক্রিয়াটি কমপড়্গে পাঁচবার অনুসরণ করব।
  3. কোন কারণে শ্বাস বা হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলে কৃত্রিম শ্বাস বা কার্ডিয়াক ম্যাসেজ দেয়া লাগতে পারে। 

 

4.jpgএক বৎসর বয়সের নীচের বাচ্চাদের ড়্গেত্রে আমরা নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারি। তবে এই পদ্ধতিশুরম্ন করলৈও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বিলম্ব হওয়া কাম্য নয়।

 

 

 

 

3-1.jpgচিত্র : 

 

 

 

 

চিত্র : 

  1. বাচ্চাটা যদি অজ্ঞান থাকে তবে তাকে কৃত্রিমভাবে শ্বাস এবং কার্ডিয়াক ম্যাসেজ দিতে হবে।
  2. বাচ্চার যদি জ্ঞান থাকে কিন্তু বাইরের বস্তু শ্বাসণালীতে ঢুকে যাওয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট হতে থাকে, তাহলে বাচ্চাটিকেউপর করে (চিত্র : ৩) আপনার একটি বাহুর উপর নিন। বাচ্চাটির ভর সামলানোর জন্য হাতসহ বাচ্চাটিকে সেইপাশের উরম্নর উপর রাখতে পারেন। অপর অব্যবহৃত হাত দিয়ে বাচ্চার দুই ডানার মাঝখানে চাপড় দিই (চিত্র : ৪)।এভাবে পাঁচবার চাপড় দেয়ার পর বাচ্চার মুখ পরীড়্গা করে দেখুন, বস্তুটি শ্বাসণালী থেকে বের হয়ে মুখে চলে এসেছেকিনা, তাহলে আঙ্গুল দিয়ে বস্তুটি বের করে নিয়ে আসেন।
  3. এরপরও বস্তুটি বের হয়ে না আসলে বাচ্চাটিকে চিৎ করে শুইয়ে বুকের মাঝখানের হাড়ের উপর পাঁচবার চাপ দিই(চিত্র : ৪) এবং খেয়াল করি শ্বাসণালীতে ঢুকে যাওয়া বস্তুটি মুখে চলে এসেছে কিনা ?  
  4. শ্বাসণালী থেকে বস্তুটি বের না হওয়া পর্যনত্ম একবার উপর করে আরেকবার চিৎ করে বারবার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করিএবং একই সাথে নির্দিষ্ট হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা নিতে থাকি।

যড়্গা প্রতিরোধের উপায়

35863.jpg

বিশ্বে যতগুলি যড়্গা প্রবণ দেশ রয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। অথচ অনেক ড়্গেত্রেই এই রোগটিপ্রতিরোধ যোগ্য।

  1. যড়্গা প্রতিরোধের সাথে ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা জরম্নরী যেমন- যেখানে সেখানে থুথু না ফেলা, হাঁচি কাশিরসময় নাক মুখ ঢাকা।
  2. জন্মের পরপরই যড়্গা প্রতিরোধি বি.সি.জি টীকা নিয়ে নেয়া। এই টীকা মোটামুটি সাত বৎসর বয়স পর্যনত্ম ফুসফুসও ফুসফুস বহির্ভূত যড়্গার বিরম্নদ্ধে প্রতিরোধ শক্তি যোগায়। আমরা ভাগ্যবান এই জন্য যে এই টীকাটি আমাদেরসার্বজনিন টীকা দান কর্মসূচীর মধ্যে অনত্মর্গত অর্থাৎ বাচ্চা বয়স সব টীকা দেয়া হলে থাকলে আমরা ধরে নিব তারবিসিজি টীকাটিও দেয়া হয়ে গেছে।
  3. সুশৃঙ্খল জীবন যাপন, সুষম খাবার এবং পরিবেশে বসবাস যড়্গা প্রতিরোধের জন্য গুরম্নত্বপূর্ণ। একত্রে গাদাগাদি করেবসবাস যড়্গার বিসত্মার বাড়ায়। ঠিক একইভাবে পুষ্টিহীনতা যড়্গা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
  4. ধূমপান, মদ্যপান কিংবা অন্য যে কোন নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করলে যড়্গা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
  5. ডায়বেটিস থাকলে তা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করম্নন। অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিসে যড়্গা হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।
  6. কফে যড়্গার জীবণু আছে, এরূপ রোগীকে যড়্গার ঔষধ সঠিকভাবে গ্রহণ করতে উৎসাহিত করা। কারণ তাদেরমাধ্যমে মুলত রোগটি থাকে।  



Comments