আগুনে পোড়া শ্বাসণালী যেমন রোগীর কষ্ট এবং যন্ত্রনা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয় তেমনি একইভাবে অনেক ড়্গেত্রে তাঁর চিকিৎসকগণও অসহায় হয়ে পড়েন। আগুনে পোড়া শ্বাসণালীর রোগীর চামড়ায় পোড়া ড়্গতসহ অথবা অনেক ড়্গেত্রে কোন প্রকার পোড়া ড়্গত ছাড়াও আসতে পারেন। শ্বাসণালী ড়্গতিগ্রস্থ হওয়ার এ ধরনের রোগী পরবর্তীতে সহজেই নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য জটিলতায় আক্রানত্ম হয়ে থাকেন। আগুনে পোড়া চামড়ার ড়্গেত্রে সহজেই চোখে পড়ে, কিন্তু শ্বাসণালী পুড়ে যাওয়ার লড়্গণগুলি প্রাথমিক পর্যায়ে দেখা না দিতে পারে, অনেক ড়্গেত্রে লড়্গণগুলি দেখা দেয় ঘটনার ২৪ থেকে ৩৬ ঘন্টার পর। শরীরে পোড়াড়্গত বেশী জায়গা জুড়ে থাকলে, অনেক ড়্গেত্রেই চিকিৎসকরা আন্দাজ করে নেন, রোগীর শ্বাসণালীও হয়ত পুড়ে গেছে। আগুন লাগলে শ্বাসণালী পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে পাঁচ বৎসরের নীচের বাচ্চাদের এবং পঁচাত্তর বৎসরের অধিক বয়স্কদের।
শ্বাসণালী আগুনে কতটা ড়্গতিগ্রস্থ হয়েছে তা নির্ভর করে-
§ অগ্নিকান্ড কোন বদ্ধ জায়গা ঘটেছে কিনা ? (যেমন কাঁচ দিয়ে ঘেরা শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিতত কড়্গ)
§ অগ্নিকান্ড কোন বদ্ধ জায়গায় ঘটেছে কিনা ? (যেমন কাঁচ দিয়ে ঘেরা শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত কড়্গ)
§ কতড়্গণ যাবত ব্যক্তিটি আগুন এবং ধোঁয়ার মধ্যে ছিলেন ?
§ কি ধরনের বস্তু পুড়েছে এবং তা থেকে কি ধরনের ড়্গতিকর ধোঁকা বের হয়েছে ?
§ রোগী আগে থেকে কোন শ্বাসের রোগে ভুগছে কিনা ?
§ কিভাবে আপনাপর শ্বাসণালী আগুনে ড়্গতিগ্রস্থ হতে পারে ?
মূলত তিন পদ্ধতিে শ্বাসণালী ড়্গতিগ্রস্থ হয়-
1. আগুনে উৎপন্ন তাপ দ্বারা তৈরী ড়্গত।
2. প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন বিষাক্ত গ্যাস দ্বারা শ্বাস রোধ হওয়া।
3. ধোঁয়া ফুসফুস এবং শ্বাসণালীর উত্তেজক হিসাবে কাজ করতে পারে।
1. আগুনে উৎপন্ন তাপ দ্বারা তৈরী ড়্গত : তাপের কারণের সাধারণত যে ড়্গত হয় তা মুখ গহ্বর সংলগ্ন শ্বাসের পথ (oropharynx) পর্যনত্ম সীমাবদ্ধ থাকে। তবে এর সাথে বাষ্প এবং বিস্ফোরণ যুক্ত হলে যে যেমন- কারখানার বয়লার বিস্ফোরিত হওয়া। শ্বাসণালীর ড়্গত পৌঁছে যেতে পারে ফুসফুসের গভীরে।
2. প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন বিষাক্ত গ্যাস দ্বারা শ্বাস রোধ হওয়া : প্রচুর পরিমান ধোঁয়াতে যদি শ্বাস রোধ হয়ে আসে, তাহলে তা আমাদের শরীরের কোষগুলিতে অক্সিজেনের ঘাটতি ঘটায়। অগ্নিকান্ডে স্থলে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়, তার উপর যদি, পোড়া বস্তু থেকে কার্বন মনো-অক্সাইড (CO) তৈরি হয়, তবে আমাদের শরীরের কোষগুলিতে অক্সিজেন ঘাটতিে আরো প্রকট হয়। তাছাড়া কার্বন মনো অক্সাইড হার্টের পাম্প করার ড়্গমতাও কমিয়ে দেয়। অগ্নিকান্ডের সময় যদি পস্নাষ্টিক (বিভন্ন রকম কারখানায় মজুদ থাকে), উল, সিল্ক, নাইলন, রাবার এবং কাগজ জাতীয় পদার্থ (গার্মেন্টস জাতীয় কারখানায় অধিক পরিমাণ থাকে। পুড়ে, তাহলে প্রচুর পরিমাণে সায়ানাইড তৈরি হয়। এই সায়ানাইড কার্বন মনো অক্সাইডের চেয়ে বিশ গুণ বিষয়াক্ত এবং এই পদার্থটি আক্রামনাত্মক ব্যক্তি দম বন্ধ করে দিতে পারে।
3. ধোঁয়ার কারণে শ্বাসণালী উত্তেজিত হলে, তাতে প্রদাহের সৃষ্টি হয় ও শ্বাসণালী সংকুচিত হয় এবং শ্বাসণালীর কোষগুলি হতে নি:সৃত পদার্থ দ্বারা ছোট ছোট শ্বাসণালীগুলি বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া শ্বাসণালী, ছাই জাতীয় দ্রব্যাদি দ্বারাও অনেক ড়্গেত্রে বন্দ হয়ে যেতে পারে।
একজন সাধারণ মানুষ কিভাবে বুঝবেন, আগুনে পোড়া রোগীটির শ্বাসণালী মারাত্মাকভাবে আক্রানত্ম হয়েছে ?
1. আক্রানত্ম ব্যক্তির গলার ¯^i পরিবর্তিত হয়ে যায়, অনেক ড়্গেত্রে তা কর্কশ ¯^‡i পরিণত হয়।
2. ব্যক্তি দ্রম্নত শ্বাস নিতে থাকে অর্থাৎ তার শ্বাস কষ্ট হয়।
3. ব্যক্তির জিহ্বা, হাতের নখ বা শরীরের অন্যান্য অংশ নীল বর্ণ ধারণ করে।
4. লোকটি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলতে পারে।
5. তার শ্বাসের সাথে বুকে ক্রমাগত আওয়াজ হতে থাকে।
6. তার কফের সাথে কালো কালো ছাই জাতীয় পদার্থ আসতে পারে।
§ চিকিৎসক প্রাথমিক পর্যায়ে বুকের এক্সরে রিপোর্ট ¯^vfvweK পেলেও খুশী নহ না, অনেক ড়্গেত্রেই শ্বাসণালীর পরিবর্তন গুলি আসে ২৪ থেকে ৩৬ ঘন্টার পর।
§ এছাড়াও চিকিৎসকগণ রোগীর অবস্থা বুঝার জন্য রক্তে বিভিন্ন গ্যাসের পরিমাণ দেখেন, কিডনী ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা বুঝে নেন, হার্টের অবস্থা বুঝার জন্য ই.সি.জি করে নেন, এছাড়াও শ্বাসণালীর অবস্থা সঠিকভাবে দেখার জন্য অধিকাংশ ড়্গেত্রে ব্রঙ্কোসকপি করে নেন।
একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে শ্বাসণালী পোড়া রোগীকে কিভাবে সাহায্য করতে পারেন ?
1. যত দ্রম্নত সম্ভব অগ্নিকান্ডের স্থান থেকে রোগীকে অপসারণ করে মুক্ত খোলা স্থানে নিয়ে আসেন।
2. নাক মুখে ছাই বা কিছু আটকে থাকলে তা অপসারণ করম্নন।
3. আপনি যদি রোগীর জন্য দ্রম্নত প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে পারেন, তবে নিঃসন্দেহে আপনি চিকিৎসার প্রথম ধাপ পূরণ করেছেন।
4. G¨v¤^y‡jÝ বহনের সময়ও রোগী যাতে যথেষ্ট অক্সিজেন পায় সেদিক নজর রাখুন।
5. যে সব হাসপাতালে বার্ণ ইউনিট আছে, সে সব হাসপাতালে এ সকল রোগীর জন্য সবচেয়ে ভাল চিকিৎসালয়। তবে এর সাথে খেয়াল রাখা উচিত এই সকল চিকিৎসা কেন্দ্রের নিবিড় পর্যবেড়্গণ কেন্দ্র (আ.সি.ইউ) আছে কিনা? কারণ শতকরা পঞ্চাশ ভাগ শ্বাসনালী পোড়া রোগীর কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাসের যন্ত্রের প্রয়োজন হয়। এর সাথে এই সব হাসপাতালে বড়্গব্যাধি বিশেষজ্ঞ থাকলে তা হবে সোনায় সাহাগা।
6. রোগী যদি পূর্বে থেকে অ্যাজমাসহ ফুসফুসের অন্যান্য রোগে ভুগতে থাকেন, তাহলে সংশিস্নষ্ট চিকিৎসককে অবহিত করম্নন।
শ্বাসণালী পোড়া কো কোন রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি থাকা উচিৎ ?
যে সকল ব্যক্তির শ্বাসণালী আগুন এবং এর ধোঁয়া দ্বারা আক্রানত্ম হয়েছে, তাদের সবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই, তবে সাধারণ ড়্গেত্রে কম পড়্গে চার থেকে ৬ ঘন্টা চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থাকা ভাল। নিম্ন লিখিত বিষয়গুলি রোগীর মধ্যে উপস্থিত থাকলে আক্রানত্ম ব্যক্তির হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত :
1. যদি এমন ঘটনা ঘটে, অক্সিকান্ডে একটি বদ্ধ ঘরে ঘটেছিল (যেমন আপনার শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত কম্পিউটার ল্যাব) এবং আক্রানত্ম ব্যক্তিটি সেখানে দশ মিনিটের বেশী আটকে ছিলেন।
2. যদি আক্রানত্ম ব্যক্তির কাশির সাথে ঘন কালো কফ বের হয়।
3. ব্যক্তিটি যদি শ্বাস কষ্টে ভুগতে থাকেন।
4. শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে ব্যক্তিটির বুক থেকে যদি বাঁশির আওয়াজের মত শব্দ বের হতে থাকে।
5. আক্রানত্ম ব্যক্তির মুখ মন্ডল যদি পুড়ে যেয়ে থাকে।
দুর্ঘটনা পরবর্তী জটিলতা : আমেরিকার একটি গবেষণায়, সাড়ে আটশত জন দশ থেকে আঠার বৎসর বয়সি শ্বাসণালী পোড়া রোগীদের মধ্যে দেখা গেছে, সেখানে মৃত্যুর হার ১৬.৪% এবং এই ড়্গেত্রে শ্বাসণালী পোড়ার সাথে যদি চামড়ায় পোড়া ড়্গত থাকেত তাহলে মৃত্যুর হার চার গুণ বেশী। আক্রানত্মব্যক্তি ক্রমাগত সুস্থ হয়ে উঠতে থাকলেও ফুসফুস কিছু কিছু সমস্যা থেকে যেতে পারে। ড়্গতিগ্রস্থ প্রধান শ্বাসণালীগুলি স্থায়ীভাবে সরম্ন হয়ে যেতে পারে।
অপর দিকে শ্বাসণালীর কিছু কিছু অংশ ড়্গতিগ্রস্থ হয়ে এর দেয়ালের স্থিতি স্থাপকতা নষ্ট হয়ে স্থায়ীভাবে প্রসারিত (bronchiectasis) থেকে যায়। ফলে এই শ্বাসণালীগুলি ঘন ঘন জীবাণু দ্বারা আক্রানত্ম হয়।
ফুসফুসের কোন কোন অংশে প্রদাহ জনিত তরল (pulmonary edema) জমে, এর অক্সিজেন সরবরাহের ড়্গমতা কমিয়ে দেয়। আবার অনেক ড়্গেত্রে ফুসফুসের কিছু কিছু অংশ চুপশে যেয়ে (atelectasis) অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে। এছাড়া নিউমোনিয়া এবং শ্বাসতন্ত্রের বিকলতা (respiratory failure) হল এর মারাত্মক জটিলতা গুলির অন্যতম।
কিভাবে আপনি আপনার শ্বাসণালীকে অগ্নিকান্ডের সময় রড়্গা করবেন ?
1. সবচেয়ে ভাল উপায় হল, অগ্নিকান্ড প্রতিরোধ করা। আধুনিকতার নামে অনেক ড়্গেত্রে আমার আমাদের ঘর-বাড়ি, অফিস, স্কুল, মার্কেট কংক্রিট এবং কাঁদ দিয়ে ঘিরে ফেলে তথাকথিত শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত আবদ্ধ কড়্গে পরিণত করছি। এই সকল আবদ্ধ কড়্গে অগ্নিকান্ড হলে শ্বাসণালী সবচেয়ে বেশী ড়্গতিগ্রস্থ হয়। তাই সব কড়্গেই থাকা উচিৎ ¯^vfvweK বায়ু চলা চলের ব্যবস্থা। অগ্নিকান্ডের সময় সম্ভব হলে সব দরজা জানালা খুলে দিয়ে ধোঁয়া বাইরে বেরিয়ে যেতে দিন অথবা বাইরের দিকে কাঁদের দেয়াল থাকলে তা ভেঙ্গে দিয়ে ধোঁয়া বেরিয়ে যেতে দিন।
অনেক বহুতল ভবনই অগ্নিকান্ডের সময় বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে। নিচের দিকে কোন তালায় অগ্নিকান্ড হলে সবাই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার চেষ্টা করেন। উপরে উঠুন, তবে নিশ্চিত থাকুন। ছাদের দরজা খোলা আছে, তা না হলে আপনি ধোঁয়ার ফাঁদে আবদ্ধ হতে পারে।
2. খেয়াল রাখুন আপনার আসবাবপত্রগুলি যেন এমন বস্তু দিয়ে তৈরি হয়, যাতে তা পুড়ে গেলেও, তা থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া যেন বিষাক্ত না হয়।
3. যদি আপনার গৃহে কিংবা কারখানায় অতিরিক্ত দাহ্য পদার্থা থাকে, তবে অগ্নিকান্ডে সতর্কীকরণ এলার্ম পদ্ধতি ব্যবহার করম্নন, যা অনেক ড়্গেত্রেই প্রাণহানি কমাবে।